
চট্টগ্রামের পরিচিত ছাত্রনেত্রী ফাতেমা খানম লিজা একটি লাইভ ভিডিওতে হাজির হয়ে নিজের রাজনৈতিক বিদায়ের ঘোষণা দিলেন। তার কণ্ঠে হতাশা, অভিমানে আচ্ছন্ন এক কঠিন বাস্তবতা—এই দেশে, বিশেষ করে চট্টগ্রামে, নারী হয়ে রাজনীতি করাটা কেবল কঠিন নয়, অনেক সময় অসম্মানজনকও।
লাইভে এসে লিজা বললেন, “আমার দ্বারা আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়।”
কাঁপা গলায় বলা এই বাক্য শুধু তার একান্ত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এ দেশের নারী রাজনীতিকদের লড়াইয়ের নির্মম প্রতিচ্ছবি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে মেয়েদের নিয়ে যা হচ্ছে তা অশ্লীল, পরিকল্পিত এবং ভয়ংকরভাবে নিপীড়নমূলক। তার ভাষায়, “আমাদের নিজেদের মানুষই করে এসব
লিজার অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু এই প্রথম কেউ প্রকাশ্যে এসে বললেন — “চট্টগ্রামে একসময় অনেক মেয়ে রাজনীতিতে ছিল, আজ তারা হারিয়ে গেছে।” প্রশ্ন জাগে: তারা কেন হারালেন? কে তাদের হারাল?
তার মতে, রাজনীতির নামে চাটুকারিতা, ষড়যন্ত্র, এবং নারীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নোংরা কল্পকাহিনি তৈরির এক অশুভ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক সহযোদ্ধা নামধারী কিছু “ভাই-ব্রাদার” এরাই নাকি এই কুৎসা রটনার নেপথ্য নায়ক।
‘মাইনাস’ সংস্কৃতি: রাজনীতিতে নারীশত্রুতার নতুন রূপ?
লিজা বারবার উল্লেখ করেছেন ‘মাইনাস’ শব্দটি—রাজনীতিতে যেটা সাধারণত প্রতিপক্ষকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখানে ‘মাইনাস’ করা হচ্ছে নারী রাজনীতিকদের, নারীত্বকে টার্গেট করে।
কথিত আছে, রাজনীতিতে শক্তিশালী হতে হলে সহ্যশক্তিও থাকতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ব্যক্তিগত চরিত্র হনন, অপপ্রচার, হেয় করা — এসবও কি সহ্য করার মধ্যেই পড়ে?
লিজা যা বললেন, তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কারণ, তিনি ছিলেন একটি আন্দোলনের মুখপাত্র — বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা একজন নারী।
কারণ, তিনি স্পষ্টভাবে বললেন, কেন্দ্রের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করছে, তাদের দায় নিতে হবে।
এবং সবচেয়ে বড় কথা, তিনি একা নন — এই লাইভ ভিডিওর প্রতিটি বাক্যে উঠে এসেছে আরও বহু ‘হারিয়ে যাওয়া’ নারীর না বলা গল্প।
সমর্থন ও সমালোচনা—দুয়েরই ঝড়
লাইভ ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলেছে। অনেকে তাকে বলেছেন “সাহসী”, আবার কেউ বলেছে তিনি “অভিমানী”। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ঘটনার মাধ্যমে চট্টগ্রামের ছাত্র রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের সংকট আরেকবার স্পষ্ট হয়ে গেল
পাঠকের মতামত